সরাসরি প্রধান সামগ্রীতে চলে যান

বার্ড ফ্লু বা এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা এভিয়ান ফ্লু

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা এভিয়ান ফ্লু ভাইরাসজনিত মুরগির একটি মারাত্বক সংক্রামক ও ছোঁয়াচে রোগ। অতি তীব্র অবস্থা বা উচ্চ মৃত্যু হারের জন্য এ রোগকে মুরগির প্লেগও বলা হয়। জনপ্রিয় রচনায় রোগটিকে বার্ড ফ্লু বলেও আখ্যায়িত করা হয়েছে। মুরগি, টার্কি, ফিজ্যান্ট, কোয়েল, হাঁস, রাজহাঁস, গিনিফাউল এবং আরও নানা জাতীয় পাখি এ রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। ধারণা করা হয় বন্য জলচর পাখিরা এ ভাইরাসের বাহক হিসেবে কাজ করে, তবে সাধারণত এরা এ রোগে আক্রান্ত হয়না। সকল বয়সের মুরগি এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে তবে বাচ্চা ও বাড়ন্ত মুরগি বেশি আক্রান্ত হয়। তাছাড়া, এটি একটি জুনোটিক ডিজিজ, যা মানুষকেও আক্রান্ত করতে পারে।

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা বা এভিয়ান ফ্লু

রোগটি ছড়ানোর কৌশল

ক) দেশের ভিতরে :

সাধারণত বন্য ও গৃহপালিত পাখি বিশেষ করে পানিতে বসবাস কারী পাখি ও হাঁস এ রোগের ভাইরাসের প্রধান বাহক । দেশী মুরগী হাঁস এবং অন্যান্য পাখি সহ বন্য ও জলজ পাখি খামারের আশে পাশে অবাধে বিচরণ করলে ভাইরাসের বিস্তার ঘটতে পারে । খামারের যন্তপাতি , কর্মচারী বা খামারে আগত লোকজন , খাদ্য সরবরাহের গাড়ী , ভ্যান , রিকসা বা বাতাস প্রভতির মাধ্যমে বিস্তার লাভ করতে পারে।

খ) দেশের বাহির হতে :

ডিম , জিবন্ত পোল্ট্রিজাত দ্রব্যাদি , খাদ্যেপাদান বা জীবন্ত মুরগি এক দেশ হতে অন্য দেশে আনায়নের মাধ্যমে বিস্তাত লাভ করতে পারে । ভ্রমণশীল পাখি বন্য জলজ পাখি বিশেষ করে বন্য হাঁস যাকে বার্ড ফ্লু ভাইরাসের আধার বলা হয়। 
রোগের লক্ষণ :
  1. ঝাঁকে ঝাঁকে মৃত্যুর সংখ্যা বাড়বে।
  2. আকস্মিক মৃত্যু।
  3. এলোমেলো পালক।
  4. হেমোরেজিক ট্রাকিয়া।
  5. পা নরম খোসাযুক্ত ডিম।
  6. ঝিমানি/ কাপুনি।
  7. হঠাং করে ডিম পাড়া বন্ধ করা।
  8. মোরগের ঝুঁটি বেগুনি রং ধারন করা।
  9. মাথা ও চোখের পাতা ও হকে পানি জমা।
  10. সবুজ রংয়ের পাতলা পায়খানা করা।
  11. নাক দিয়ে রক্ত মিশ্রিত শ্লেশ্মা নির্গমন।
  12. শ্বাস কষ্ট ইত্যাদি ।

রোগ নির্ণয় ও চিকিংসা :

রোগের লক্ষন ও রোগের ইতিহাস যেমন আক্রান্ত ও মৃত্যুর হার , ক্লিনিক্যাল ও পোষ্ট মটেম চিহ্ন দেখে প্রাথমিক ভাবে এ রোগ সনাক্ত করা যায়। জীবন্ত মুরগি থেকে ক্লোয়াকা , ল্যারিংগস, হতে সোয়াব এবং বিষ্টা সংগ্রহ করে প্ররীক্ষাগারে পাঠায়ে রোগ সনাক্ত করা যায়। মৃত্যু মুরগির ট্রাকিয়া, ফুসফুস, অন্ননালি, প্লিহা, লিভার , কিডনি , হার্ট, ব্রেইন, ইত্যাদি সংগ্রহ করে পরীক্ষাগারে পাঠায়ে রোগ সনাক্ত করা যায় । ভাইরাস রোগের সাধারণত চিকিৎসায় সুফল পাওয়া যায় না

করণীয়ঃ

এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত কোন মুরগি খালি হাতে ধরা যাবে না। ভুলবশত মুরগি ধরে ফেললে সাথে সাথে সাবান দিয়ে হাত ভাল করে ধুতে হবে। মৃত মুরগি মাটির নিচে পুতে ফেলতে হবে। কোন এলাকায় মুরগির মৃত্যুর হার অস্বাভাবিক মনে হলে সাথে সাথে ডাক্তারকে জানাতে হবে। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা আক্রান্ত খামারের সকল যন্ত্রপাতি পুড়িয়ে ফেলতে হবে অথবা গ্লুটারএল্ডিহাইড জাতিয় ডিজইনফেকটেন্ট দ্বারা ভাল করে ধুয়ে ফেলতে হবে। এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জার বিষয়ে দেশেরর সকল জনগণকে সচেতন হতে হবে ।

বার্ড ফ্লু প্রতিরোধে কিছু পরামর্শঃ


বার্ড ফ্লু (এভিয়ান ইনফ্লুয়েঞ্জা) ভাইরাসজনিত ছোঁয়াচে রোগ। এর জীবাণু বার্ড ফ্লু আক্রান্ত হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য পাখির মল, রক্ত ও শ্বাসনালীতে বাস করে। মানুষ ঘটনাচক্রে এ রোগে আক্রান্ত হয়। প্রাপ্তবয়স্কদের ক্ষেত্রে বেশিরভাগ সংক্রমণই ঘটেছে তাদের যারা আক্রান্ত পাখি জবাই বা পালক ছাড়ানোর জন্য নাড়াচাড়া করেছে। আবার যেসব শিশু আক্রান্ত পাখি বা মৃত হাঁস-মুরগি নিয়ে খেলা করে তাদেরও এ রোগ হতে পারে। এ রোগটি সাধারণত শুরু হয় জ্বর-সর্দি-কাশির মাধ্যমে এবং পরে তা মারাত্মক নিউমোনিয়ার রূপ ধারণ করে, যার পরিণতি হচ্ছে মৃত্যু।
  1. খালি হাতে অসুস্থ বা অস্বাভাবিকভাবে মৃত হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরাছোঁয়া ও নাড়াচাড়া করা যাবে না।
  2. বাড়িতে রোগে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি জবাই করা বা পালক ছাড়ানো অথবা নাড়াচাড়া করা যাবে না।
  3. রোগে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরাছোঁয়া ও সেগুলো নিয়ে খেলাধুলা করা থেকে শিশুদের বিরত রাখতে হবে।
  4. হাঁস-মুরগি বা পশুপাখি ধরাছোঁয়ার পর ভালো করে সাবান বা ছাই এবং পানি দিয়ে দুই হাত পরিষ্কার করে ধুতে হবে।
  5. হাঁস-মুরগি বা পশুপাখি দেখাশোনা করার সময় কাপড় দিয়ে নাক-মুখ ঢেকে নিতে হবে। পশুপাখি নাড়াচাড়ার পর সে হাত না ধুয়ে চোখ, নাক বা মুখে লাগানো যাবে না।
  6. হাঁস-মুরগির মাংস ভালোভাবে রান্না করতে হবে। আধা সেদ্ধ মাংস, ডিম বা মাংসের তৈরি খাবার খাওয়া যাবে না।
  7. বার্ড ফ্লু রোগ ছড়িয়ে পড়েছে এমন স্থানে বা তার আশপাশে যারা বসবাস করে, তাদের জীবন্ত হাঁস-মুরগি ও অন্যান্য পাখি ক্রয়-বিক্রয় বা জবাই করার স্থানে যাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।
  8. রোগে আক্রান্ত হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য পাখির মল সার অথবা মাছের খাদ্য হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে না।
  9. যদি কোথাও হঠাৎ হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য পাখি অস্বাভাবিক হারে মারা যায়, তবে সঙ্গে সঙ্গে ওয়ার্ড কমিশনার অথবা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দফতরে জানাতে হবে। মৃত হাঁস-মুরগি এবং পাখি মাটিতে পুঁতে ফেলার সময় অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে।
  10. হাঁস-মুরগি বা অন্যান্য পাখি ধরাছোঁয়ার পর যদি কেউ জ্বর-সর্দি-কাশি জাতীয় কোনো রোগে ভোগেন তবে তাড়াতাড়ি ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজনে কাছাকাছি স্বাস্থ্যকেন্দ্র/ হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য যেতে হবে। রোগে আক্রান্ত বা মৃত হাঁস-মুরগির সংস্পর্শে আসার বিষয়টিও তাদের জানাতে হবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হাঁস-মুরগির টিকা প্রদান কর্মসূচি

মুরগির পোল্ট্রি খামার শুরু করার বিবেচ্য বিষয় সমূহ ( পর্ব-১)

মুরগির পোল্ট্রি খামার শুরু করার বিবেচ্য বিষয় সমূহ ( পর্ব-২)