হাঁস পালন

কিশোরগঞ্জ হাঁস প্রজনন খামার এন্ড হ্যাচারী লি:

হাঁস পালন

হাঁস পালনে সুবিধা :

আমাদের দেশের আবহাওয়া হাঁস পালনে খুবই উপযোগী। হাঁসের রোগবালাই তুলনামুলক খুবই কম। তাছাড়া খাবারের তেমন অভাব হয় না। দেশি মুরগি যেখানে গড়ে বছরে ৫৫টি ডিম দেয়, দেশি হাঁস সেখানে ৯০টির বেশি ডিম দিয়ে থাকে। আর উন্নত জাত হলে বছরে ২৫০-৩২০টি ডিম দিয়ে থাকে।


হাঁস পালন পদ্ধতি:

👉👉১) আবদ্ধ পদ্ধতি- এ পদ্ধতিতে পুরোপুরি হাঁস গুলোকে ঘরের মধ্যে বন্দি রেখে লালন পালন করা হয়। তবে এ পদ্ধতিতে হাঁসের বাচ্চা ৪-৮ সপ্তাহ পর্যন্ত পালন করা সুবিধা জনক। এ পদ্ধতি আবার ৩ ধরনের। ফ্লোরে লিটার দিয়ে পালন, খাঁচায় পালন, তারের জালের মাচায় পালন।

👉👉২) অদ্ধ আবদ্ধ পদ্ধতি- এ পদ্ধতিতে হাঁস গুলো রাতে ঘরে বন্দি থাকে এবং দিনের বেলা ঘরের সামনে চারনে ঘুরে বেড়াবে। চারনে ২০ ইঞ্চি দৈর্ঘ্যের ৬-৮ ইঞ্চি গভীরতা বিশিষ্ট্য পানির চৌবাচ্চা দিতে হয়। যাতে হাঁস গুলো সহজে পানি খেতে পারে এবং ভাসতে পারে।

👉👉৩) মুক্ত রেঞ্জ পদ্ধতি- এ পদ্ধতিতে হাঁস গুলোকে শুধু রাতে ঘরে বন্দি করে রেখে দিনের বেলা হাঁস বিভিন্ন জায়গা যেমন: নদী-নালা, খাল-বিল, হাওরে, পুকুরে-ডোবায় বেড়িয়ে খায়।

👉👉৪) হার্ডিং পদ্ধতি-  এ পদ্ধতিতে হাঁস গুলো কে কোন প্রকার ঘরে রাখা হয় না। যে সমস্ত এলাকায় যেমন: নদী-নালা, খাল-বিল, হাওরে খাবার আছে সে সমস্ত এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়। সারা দিন হাঁস খাওয়া দাওয়া করার পর রাতের বেলায় উচু জায়গায় সকাল পর্যন্ত আটকিয়ে রাখা হয়। সেখানের খাদ্য শেষ হলে অন্য এলাকায় নিয়ে যাওয়া হয়।

👉👉৫) ল্যান্টিং পদ্ধতি- এ পদ্ধতিতে হাঁস গুলো কে বিভিন্ন জলাশয় যেমন: নদী-নালা, খাল-বিল, হাওরে খাবার আছে সে সব জলাশয়ের পাশে ঘর তৈরি করে পালন করা হয়। 

উন্নত হাঁসের জাত :

গৃহপালিত ৩ ধরনের হাঁস আছে
👉১) ডিম উৎপাদনের জন্য-[জিনডিং, খাঁকি ক্যাম্পবেল, ইন্ডিয়ান রানার ইত্যাদি]
👉২) মাংস উৎপাদনের জন্য-[পিকিং বা বেইজিং, মাসকোভি, আয়লেশবারি, রুয়েন ক্যায়ুগা, টুলুজ, এমডেন ইত্যাদি]
👉৩) ডিম ও মাংস উৎপাদনের জন্য-[পিকিং বা বেইজিং, মাসকোভি,খাঁকি ক্যাম্পবেল ইত্যাদি।

হাঁসের ঘর তৈরি :

পুকুরপাড়ে কিংবা পুকুরের ওপর ঘরটি তৈরি করতে হবে। ঘরের উচ্চতা ৫-৬ ফুট হলে ভালো হয়। ঘর তৈরিতে বাঁশ, বেত, টিন, ছন, খড় ইত্যাদি ব্যবহার করা যেতে পারে। তবে ইট দিয়ে মজবুত করে ঘর তৈরি করতে পারলে ভালো হবে। ঘরটি খোলামেলা হতে হবে এবং সাপ ও ইঁদুর থেকে মুক্ত রাখতে হবে। শহরে বিভিন্ন মাপের চৌবাচ্চায় হাঁস পালন করা হচ্ছে । এক্ষেত্রে প্রশস্ত ছাদ থাকলে সুবিধা বেশি। ছাদের একপাশে ঘর অপর পাশে চৌবাচ্চা নির্মাণ করতে হবে। প্রজননের জন্য আটটি হাঁসের সঙ্গে একটি পুরুষ হাঁস রাখা দরকার। এরপর দেশি মুরগির সাহায্যে অথবা ইনকিউবেটরে হাঁসের ডিম ফোটানো যায়।

হাঁসের জাত পরিচিতি

👉👉জিনডিং হাঁসঃ উৎপত্তিঃ ইহার উৎপত্তি স্থল চীন।
বৈশিষ্ট্যঃ ১. হাঁসীর পালকের রং খাকীর মাঝে কালো ফোটা এবং হাঁসার কালো ও সাদা মিশ্রিত।২. ডিমের রং নীলাভ।৩. ঠোঁট নীলাভ/হলদে।
উপযোগীতা ডিম-এর উদ্দেশ্যে এ জাতের হাঁস পালন করা হয়। বার্ষিক ডিম উৎপাদন গড়ে ২৭০-৩২৫ টি। বয়ঃ প্রাপ্তদের ওজন ২- ২.৫ কেজি হয়ে থাকে।
জিনডিং হাঁস
জিনডিং হাঁস

👉👉মাসকোভিঃ উৎপত্তিঃ এ জাতের হাঁসের আদি জন্মস্হান দক্ষিণ আমেরিকা।
বৈশিষ্ট্যঃ ১. পালকের রং সাদা ও কলো। ২. মাথায় লাল ঝুটি।৩. ডিমের রং সাদা। ৪. দেহের আকার বড়। উপযোগীতাঃ এ জাতের হাঁস মাংসের জন্য প্রসিদ্ধ কারণ প্রাপ্ত বয়স্ক একটি হাঁসা প্রায় ৫ কেজি এবং একটি হাঁসী ৪ কেজি ওজনের হয়ে থাকে। বৎসরে গড়ে প্রায় ১২০ টি ডিম দেয়। 
মাসকোভি হাঁস

👉👉ইন্ডিয়া রানারঃ এ জাতীয় হাঁস তিন রকমের হয়। সাদা, পাঁশুটে অথবা সমস্থ পিঠে পেন্সিলের শীষের মত দাগ কাটা। এ জাতীয় হাঁস ডিমের জন্য বিখ্যাত। এর তিনটি উপজাত আছে। এর মধ্যে সাদা জাতটি বেশি প্রচলিত।বার্ষিক ডিম উৎপাদন গড়ে ২৫০-৩০০ টি। বয়ঃ প্রাপ্তদের ওজন হাঁসা ২- ২.৫ কেজি এবং হাঁসী ১.৫-২ কেজি হয়ে থাকে।
ইন্ডিয়া রানার হাঁস

👉👉পিকিং বা বেইজিং হাঁস: বেইজিং বা পিকিং হাঁস একটি পুরানো দ্বৈত উদ্দেশ্যে হাঁসের জাত( ডিম এবং মাংস) । এটি চীন থেকে উদ্ভূত হয়েছিল এবং এখন এটি অন্যতম জনপ্রিয় বাণিজ্যিক হাঁসের জাত। এটি চীনের ম্যালার্ড থেকে জন্মগ্রহণ করা হয়েছিল। তাদের ডিম দেওয়ার ক্ষমতা এবং সূক্ষ্ম মাংসের মান তাদের আমেরিকা  সহ সারা পৃথিবীতে হাঁস চাষীদের প্রথম পছন্দ করে তোলে। আজ বেইজিং বা পিকিং হাঁসটি বিশ্বজুড়ে খুব জনপ্রিয় এবং উপলভ্য।
পালকের রং সাদা, ডিমের রং সাদা, বুক প্রশস্থ এবং মসৃন ভারী শরীর ও শান্ত প্রকৃতির। প্রাপ্ত বয়স্ক হাঁস ৪-৫ কেজি ওজন হয় এবং বছরে গড়ে ১৫০-১৭০ টি ডিম দেয়।

পিকিং বা বেইজিং হাঁস

👉👉খাঁকি ক্যাম্পবেল: খাঁকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস বাংলাদেশে বর্তমানে ডিম উৎপাদনের উদ্দেশ্যে হাঁস পালন ক্ষেত্রে বেশ জনপ্রিয়। ইংল্যান্ডের এই সংকর জাতটির হাঁসের রং খাকি বলে এর নাম খাকি ক্যাম্পবেল। ক্যাম্পবেল নামক এক মহিলা ১৯০১ সালে ইংল্যান্ডের বিভিন্ন জাতের হাঁসের মধ্যে সংকরায়ন ঘটিয়ে এ জাত সৃষ্টি করেন। তাই এই জেতের উৎপত্তিস্থল হলো ইংল্যান্ড।
১. পালকের রং খাকি, মাথা এবং ঘাড় ব্রোঞ্জ রঙের,  পা ও পায়ের পাতার রং হাঁসার হলুদ, হাঁসীর কালো। ঠোটের রং হাঁসা নীলাভ, হাঁসী কালো।
২. ডিম-এর উদ্দেশ্যে এ জাতের হাঁস পালন করা হলেও ডিম পাড়ার পর স্ত্রী হাঁস এবং হাঁসাকে মাংস হিসেবে ব্যবহার করা যায়।
৩. এ হাঁসের মাংসও মুরগির মতোই পুষ্টিকর।
৪. এই  হাঁস কেবল খাবার ও গলা ডোবানোর জন্য প্রয়োজনীয় পানি পেলেই সহজ ও স্বাভাবিকভাবে বেঁচে থাকতে পারে। তাই পুকুর বা অন্যান্য জলাশয় ছাড়াই এ হাঁস পালন সম্ভব।
৫. খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁস বেশ কষ্টসহিষ্ণু।
৬. খাকি ক্যাম্পবেল হাঁস সাড়ে ৪ মাস বয়স থেকেই ডিম দিতে শুরু করে এবং বছরে গড়ে প্রায় ২৫০- ২৬০টি পর্যন্ত ডিম দেয়।
৭. ডিমের রং সাদা এবং আকারও অপেক্ষাকৃত বড়।
৮. খাকি ক্যাম্পবেল জাতের হাঁসের বয়ঃ প্রাপ্তদের ওজন ২- ২.৫ কেজি হয়ে থাকে।
৯.  এ জাত টানা ১-৩ বছর পর্যন্ত একই হারে ডিম পাড়ে।
১০. ডিম উৎপাদনের জন্য দেশি হাঁসের ক্ষেত্রে পুরুষ হাঁসের প্রয়োজন হলেও খাকি ক্যাম্পবেল জাতের ক্ষেত্রে পুরুষ হাঁসের উপস্থিতি প্রয়োজন হয় না।
খাঁকি ক্যাম্পবেল হাঁস

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

হাঁস-মুরগির টিকা প্রদান কর্মসূচি

মুরগির পোল্ট্রি খামার শুরু করার বিবেচ্য বিষয় সমূহ ( পর্ব-১)

মুরগির পোল্ট্রি খামার শুরু করার বিবেচ্য বিষয় সমূহ ( পর্ব-২)